১৯৯১ সাল। মান্ডাতে যেখানে আমার চেম্বার ছিল, সে বাড়িওয়ালার ছেলে হঠাৎ ঈদের পরদিন রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছেলেটির বয়স আনুমানিক ১০/১২ বছর। তার পেটে প্রচন্ড ব্যথা, পেট ফাঁপা।যন্ত্রণায় ছটফট করছে। সে সময় রাত আনুমানিক ১১ টা। পেট ব্যথার কারণ হিসেবে জানতে পারলাম অতিরিক্ত ঝাল মশলা, চটপটি -ফুচকা খেয়েছিল। সে হিসাবে তাকে Nux vom দিয়েছিলাম। তাতে তার তেমন পরিবর্তন আসেনি।
রাত যখন ১২ টা, তার পেটে ব্যথা এত প্রচন্ড হলো যে, আমরা হাসপাতালে নিতে বাধ্য হলাম।
রোগী নিয়ে আমরা রাত ১২ টায় মান্ডা থেকে বের হলাম। প্রথমে মনোয়ারা হাসপাতালে গেলাম সেখানে রোগী ভর্তি করেনি, তারপর গেলাম ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল সেখান থেকে বলে দেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যাওয়ার জন্য। তাদের কথামত আমরা ঢাকা মেডিকেলে গেলাম। ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার পর আউটডোর ডাক্তার বলেন,এই রোগের ডাক্তার এখন নেই। আপনারা মিটফোর্ড হাসপাতালে চলে যান। তাদের কথামতই আমরা মিটফোর্ড হাসপাতালে চলে এলাম। তখন রাত প্রায় ৩টা বাজে।
রোগী তখন প্রচন্ড যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর রাত পৌনে চারটায় ডাক্তার এলেন। তিনি এসে কয়েকটি টেস্ট লিখলেন। যা বাহিরে প্রাইভেট হাসপাতালে করতে হবে। ডাক্তারের কথামত আমরা বাহিরে ল্যাবে পরীক্ষা করাতে গেলাম।
সেখানে টেস্টের জন্য রক্ত, প্রস্রাব, পায়খানার নমুনা ও আল্ট্রাসোনোগ্রাম, এক্সরে করতে করতে ফজরের নামাজের আজান হয়ে যায়। রোগীকে রেখে আমরা নামাজে গেলাম। রিপোর্ট পেতে আরও দুই ঘন্টা সময় লাগবে।
আমরা নামাজ পড়ে এসে দেখি অামাদের রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেল। তাও রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম যদি রিপোর্টে কিছু ধরা পড়ে যায়। সকাল ৭টায় রিপোর্ট পেলাম। রোগীর তেমন কোন সমস্যাই নেই। পেটে হালকা গ্যাস আছে।
আজ ২০২১ সালে অর্গাননের ২৮১ নং সূত্র প ড়তে এসে উপরের বর্ণিত ঘটনাটি মনে পড়লো। এই ঘটনার সাথে অর্গাননের ২৮১ নং সূত্রের হুবহু মিল রয়েছে।
সেদিন আমাদের রোগীর সারা রাত্রি এই হাসপাতাল থেকে ঐ হাসপাতাল ঘুরতে ঘুরতে সুস্থ হয়ে গেল কারণ তার পেটে শুধু গ্যাস ছিল। অন্য কোন সমস্যা ছিলো না । অন্য কোন সমস্যা থাকলে এই পেটের ব্যথা, গাড়ি ভ্রমণে বাড়তো কিন্তু কমতো না।
ঠিক তেমনি পুরাতন রোগে অাক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার শেষের দিকে রোগীর মধ্যে যে বৃদ্ধি দেখতে পাওয়া যায় তা যদি প্রকৃত রোগগত বৃদ্ধি হয়ে থাকে তা কখনো বিনা ওষুধে সারবেনা। কিন্তু এই বৃদ্ধি যদি হোমিওপ্যাথির বৃদ্ধি হয়ে থাকে তাহলে রোগীকে বিনা ওষুধে দশ থেকে পনের দিন রাখলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে।
মুলকথাঃ- ২৮১ নং সূত্রে বলা হয়েছে, রোগীর চিকিৎসার শেষের দিকে যে বৃদ্ধি তা প্রকৃত রোগগত হলে বিনা ওষুধে সারবেনা আর তা যদি হোমিওপ্যাথি বৃদ্ধি হয় সে ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ দিন প্লাসিবো সেবন করালে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হবে।
লেখক- ডা. ফারুকী
০১৭১১০৩৯২৩৯