সঠিক পথের সংজ্ঞার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ য পথে চলতে কোন খারাপ চিন্তা, ারাপ ভাবনা, কোন টেনশন, কোন কিছুরই প্রয়োজন হয় না সে পথের আবার সংজ্ঞা কি!
গ্রাম্য একটি প্রবাদ আছে “যদি হয় পথ ভালো আড়ের চেয়ে বেড় ভালো” কথার অর্থ সঠিক পথ একটু লম্বা হলেও সেই পথে চলা উচিত।
সঠিক পথে চলতে থাকলে নির্দিষ্ট গন্তব্যে বিলম্ব হলেও পৌছা সম্ভব। কিন্তু উল্টো পথে কখোনোই সঠিক গন্তব্যে পৌছা যায় না। উল্টো গতির ফলাফল কখোনো মঙ্গল হয় না।
গত ২০০ বছরের আবিষ্কৃত হোমিওপ্যাথি, ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এই হোমিওপ্যাথির উন্নয়ন যেখানে রেখে গিয়েছিলেন বা উনার আবিষ্কার উনার জীবদ্দশায় যে গতিতে উন্নতি হচ্ছিল আজ সে গতি এই বিশ্বের উন্নতির গতির মধ্যে হোমিওপ্যাথির উন্নতির গতি কত % পৌঁছেছে তা কম বেশি সবাই অবগত।
এ উন্নতি বলতে আমি কলেজ, ডাক্তারদের চাকুরি, হাসপাতাল করা এগুলোকে বুঝাচ্ছি না। বর্তমান বিশ্বে হোমিওপ্যাথি ডাক্তার বাড়ছে, চেম্বার বাড়ছে কিন্তু আমাদের রোগীদের আরোগ্য সে হারে বাড়ছে কি?
এই যে এত ধীর গতির উন্নতি আমার ব্যাক্তিগত মতে, আমরা যে পদ্ধতিতে ওষুধ বাছাই করছি আমার মনে হয় এর মধ্যে ত্রæটি রয়েছে।
গত ২০০ বছর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা যত কষ্ট করে দিন রাত পড়াশোনা করে হোমিওপ্যাথির হাজারো ওষুধ মনে রেখে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। এর কারনে আমরা শুনে আসছি হোমিওপ্যাথি ডাক্তারদের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পড়াশোনা করতে হয়।
গত ২০০ বছরে যে চিকিৎসকগণ হোমিওপ্যাথির মূল ধারায় চিকিৎসা পদ্ধতি করে আসছেন তাদের তেমন কষ্ট হয়নি কিন্তু কষ্ট হয়েছে তাদের যারা হাজারো ওষুধ মনে রেখে চিকিৎসা করতেন। এই ওষুধ মনে রেখে চিকিৎসা করা আমি ভুল বলতে চাচ্ছি না কিন্তু এটি কষ্টসাধ্য পথ।
পক্ষান্তরে, এত সহজ সরল সঠিক পথ থাকার পরেও আমরা কেন এত কঠিন পথ বেছে নিব।
সঠিক সহজ পথ বাদ দিয়ে আমরা হোমওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে কঠিন দূর্গম পথ দিয়ে যেভাবে পরিচালিত করছি তাতে আমরা চিকিৎসকরা নিজেরাও কষ্ট পাচ্ছি রোগীদেরও সঠিক আরোগ্য দিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি।
এই প্রসঙ্গে আমি কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি তাহলে বুঝতে পারবেন-
১। রোগী যখন বলে তার উদ্গারের সমস্যার কথা বলে তখন হোমিওপ্যাথিতে ২৬৭টি ওষুধের কথা মনে পড়ে। এই রোগীর রোগীলিপিতে যখন পাওয়া গেলো খোলা বাতাসে উদ্গর দেখা দেয়।
এবার আপনাকে এই ২৬৭টি ওষুধের মধ্যে খঁজতে হবে কোন ওষুধটির উদ্গার খোলা বাতাসে দেখা দেয়। অনেক খেঁজাখোঁজির পর খুঁজে পেলাম ওষুধটি Nan-m
২. রোগীর উদ্গার রাতে শুইলে। রোগীর রাতে উদগার হোমিওপ্যাথির ২১ টি ওষুধের মধ্যে রয়েছে। এবার এই ২১ টির মধ্যে খুজতে হবে কোন ওষুধটির মধ্যে রাতে শুইলেই উদগার। অনেক কষ্ট করে সব ওষুধ খুঁজে পাওয়া গেল Calc- carb এর মধ্যে এই লক্ষণটি রাতে শুইলে উদগার।
৩। রোগীর ভোর ৫ টার সময় উদগার। হোমিওপ্যাথিতে সকালে উদগার ২৫ টি ওষুধের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। রোগীর উদগার ভোর ৫টায় এই এত সব ঔষধের মধ্যে তন্ন তন্ন করে খুজে বের করতে হবে কোন ওষুধের মধ্যে ভোর ৫টায় উদগার। দীর্ঘ সময় ব্যয় করে এই ২৫ টি ওষুধ গুলোর মধ্যে খুজঁতে থাকলে ১টির মধ্যে পাওয়া যাবে ভোর ৫টায় উদগার ওষুধটির নাম Nat-c কখনো আবার নাও পেতে পারেন, চোখের আড়ালে পড়ে যেতে পারে।
অতীত থেকে বর্তমানেও যে সকল চিকিৎসক দিন রাত পড়াশোনা করে হাজারো ওষুধ মুখস্থ রেখে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের জন্য অনেক কষ্ট, অসম্ভব কাজটি উনারা করে যাচ্ছেন। আর যারা এদের মত পড়াশোনা না করেও রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের কথা না হয় নাইবা বললাম।
এই প্যাথিতে ডাক্তার স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের দেখানো ওষুধ বাছাইয়ের সহজ পথটি বাদ দিয়ে আমরা উল্টো পথে হাটছি। যার কারনে আমাদের হোমিওপ্যাথির অগ্রগতি স্থগিত হয়ে যাচ্ছে।
ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের দেখানো ওষুধ বাছাইয়ের পদ্ধতিটি সহজ ও সঠিক পথ। এই সহজ সঠিক পথটি আমরা অধিকাংশ চিকিৎসকই ব্যবহার করি না। হ্যানিম্যানের দেখানো ওষুধ বাছাইয়ের সহজ পথটি হল সম্পূর্ণ আদর্শ রোগীলিপি করে ওষুধ বাছাইয়ের সময় রেপারটরির সাহায্য নেয়া।
বর্তমান বিশ্বে এই হোমিওপ্যাথিতে যত ডাঃ রয়েছেন সকলেই রোগীদের আদর্শ রোগীলিপি করে আয়ত্বে থাকা ওষুধের সাহায্যে ওষুধ নির্বাচনের সময় রেপারটরির সাহায্য নিলে আজ পৃথিবীতে মানুষ যেভাবে হোমিওপ্যাথির স্বাদ উপভোগ করছেন এর চেয়ে আরো বেশি স্বাদ উপভোগ করবেন।
আমার এই লেখা দ্বারা হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারদের এ কথাই জানাতে চাচ্ছি, আপনি যেভাবেই রোগীর জন্য ওষুধ নির্বাচন করুন না কেন এর সাথে সম্পূর্ণ রোগীলিপি ও ওষুধ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রেপারটরির সহায়তা নিবেন।
হ্যানিম্যানের দেখানো এই ওষুধ বাছাইয়ের সহজ ও সঠিক নীতিটি মেনে চললে আমাদের কষ্ট লাঘব হবে। সঠিক ওষুধ নির্বাচনের সংখ্যাও বেড়ে যাবে, রোগীর আরোগ্যের হার বাড়বে। তখন আমরা হোমিওপ্যাথরা জাতীয় স্বাস্থ্যখাতে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবো।
লেখক- ডা. ফারুকী
০১৭১১০৩৯২৩৯