Hsrf_logo

HSRF – Homoeopathy Study And Research Foundation

হোমিওপ্যাথি একটি সম্পূর্ণ আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির নাম। ইহা বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা বিধান। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে মানব দেহে যত প্রকার রোগ দেখা দেয়, সে সব রোগের ক্ষেত্রে সফলতার সাথে আরোগ্য করার মত ওষুধ রয়েছে, রয়েছে চিকিৎসকও। হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্যান্য প্যাথিতে ওষুধের সংখ্যা বা গ্রæপ স্বল্প কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে অন্যান্য প্যাথি অপেক্ষা অনেক বেশী ওষুধ রয়েছে।
হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্যান্য প্যাথির স্বল্প সংখ্যক ওষুধের মাঝেও রয়েছে অনেক শাখা অর্থাৎ রোগ বিশেষে ওষুধগুলো ভাগ করা হয়েছে। তাই যে রোগের যে ওষুধ তা দিতে কোনো অসুবিধা হয় না।
অন্যান্য প্যাথির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ টি গ্রæপের ওষুধের বেশী পড়াশোনা করতে হয় না। কারণ হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্যপ্যাথিতে রোগীদের রোগের নামে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে, তাই যে রোগের যে ওষুধ তা দিতে কোন প্রকার কষ্ট বা অসুবিধা হয় না।
পৃথিবী এখন অনেক আধুনিক। আধুনিক চিকিৎসা জগতে মানুষ অল্প পরিশ্রমের মাধ্যমে অনেক কঠিন কাজ সহজে করতে পারে। এখন চিকিৎসকগণ রক্ত/ প্রস্রাব/ মল পরীক্ষা করলেই রোগের ধরন অনুযায়ী ওষুধের গ্রæপ জানতে পারে। এর জন্য বেশী কষ্ট করতে হয় না।
পক্ষান্তরে কষ্ট শুধু হোমিওপ্যাথিতেই। কারণ হোমিওপ্যাথিতে হাজার প্রকার ওষুধ রয়েছে এখানে কোন রোগের নামে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। তাই রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে এত সব ওষুধ থেকে রোগীর সদৃশ্য একটি সুনির্ধারিত ওষুধ বাছাই করা কষ্টসাধ্য।
যেমন- কোন কারখানায় ২০টি মেশিন থাকলে সেই মেশিনগুলো চালানোর জন্যে যেখানে ২০জন কর্মচারী প্রয়োজন। সে মেশিনগুলো একজন কর্মচারিকে চালাতে বলা যেমন অসম্ভব তেমনি হোমিওপ্যাথির মত এত বিশাল ওষুধ ভান্ডার থেকে একজন চিকিৎসককে যে কোন রোগীর যে কোন রোগের সদৃশ একটি ওষুধ নির্বাচন করতে বলাও অবান্তর। কারণ একজন মানুষের ক্ষমতার একটা পরিসীমা আছে, যার বেশী সে করতে পারে না।
যখনি একজন কর্মচারী একাই ২০টি মেশিন চালাতে চান, যেখানে কর্মচারী প্রয়োজন ২০ জন, সেখানে এককভাবে উক্ত কাজটি করা অসম্ভব। একজন দক্ষ কর্মচারী হয়তো বা সর্বোচ্চ ২ বা ৩ জনের সমান কাজ করতে পারবেন, এর বেশী নয়। এর থেকে বেশী করতে গেলে বার বার কাজে ভুল হবে। আর কারখানার ২০টি মেশিন থেকে যে পরিমাণ উৎপাদন হতে পারতো তা কখনই সম্ভব নয়। অর্থাৎ ২০টি মেশিনের সমপরিমাণ কাজ হবে না। যখনই ২০টি মেশিন ২০ জন কর্মচারী যতেœর সাথে চালাবেন তখনই সেই মেশিন থেকে চাহিদা মত সর্বোচ্চ উৎপাদন করা সম্ভব। ঠিক তেমনি হোমিওপ্যাথিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলে রোগীদেরকে একটি সদৃশ্য ওষুধ দিতে পারবেন।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাবিদ্যা এক মহাসমুদ্রের মতো। এই মহাসমুদ্রের পানি সেচার জন্য একজনকে দায়িত্ব দিলে যেমন কোনভাবেই মহাসমুেদ্রর পানি সেচা সম্ভব নয়, তেমনি হোমিওপ্যাথির এই বিশাল ওষুধ ভান্ডারও একজন চিকিৎসকের পক্ষে মনে রাখা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় বর্তমানে প্রায় ৪০০০ থেকে ৪৫০০ প্রকারের ওষুধ রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে প্রত্যেকটি ওষুধের ভিন্ন ভিন্ন কার্যক্রম, রয়েছে শক্তির ভিন্নতা, ভিন্নতাভেদে আলাদা আলাদা কার্য বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ কোন কোন ওষুধের নিম্ম শক্তির এক কাজ, উচ্চ শক্তির ভিন্ন কাজ এর ফলে ওষুধের তালিকা হয়ে যায় আরো বিশাল।
“হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মূল কথা হলো- রোগের চিকিৎসা নয়, রোগীর চিকিৎসা”। তাই রোগীর গভীর পর্যবেক্ষন অর্থাৎ রোগীর অবস্থান, পরিবেশ, জীবনাচরণ, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য করতে হয়। কেননা প্রত্যেকটি বিষয়ের সাথে তার চিকিৎসাও হয় ভিন্ন ভিন্নœ। ভিন্ন হয় তার নির্বাচিত ওষুধটিও। মনে রাখতে হবে যে, কোন ব্যাক্তি যে রোগে ভোগে তাকে সে রোগের রোগী বলা হয়। আমরা ডায়রিয়ার (রোগের) চিকিৎসা করি না ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করি। ডায়াবেটিকের চিকিৎসা করি না ডায়াবেটিকে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করি। বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ যত জটিল ও নতুন রোগে আক্রান্ত হয় তা কেবল একজন চিকিৎসকের পক্ষে চিকিৎসা করা সম্ভবপর নয়।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির চেয়ে অনেক জটিল কারণ অন্যান্য প্যাথিতে রোগের নামে ২/১ টি গ্রæপ ওষুধ রয়েছে। পক্ষান্তরে, হোমিওপ্যাথিতে যে কোন রোগের রোগীই আসুক না কেন এক রোগের রোগীর নামে অনেক ওষুধ রয়েছে। যদি বলি শুষ্ক কাশি, তবে এই কাশির জন্য প্রায় ৩১৩টি ওষুধ রয়েছে। একজন চিকিৎসকের সেই রোগীর শুষ্ক কাশির ওষুধ দিতে হলে ৩১৩টি ওষুধের শুষ্ক‹ কাশির আলাদা আলাদা লক্ষণ মনে রাখতে হবে এবং একটির সাথে অন্যটির পার্থক্য জানা থাকতে হবে। তা না হলে সেই রোগীর শুস্ক কাশির সদৃশ্য ওষুধ দেয়া সম্ভব হবে না। কোন রোগী যে রোগ নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে, তার মধ্যে বর্তমান রোগের সুনির্ধারিত ওষুধ নির্বাচন করতে পারলেই রোগীর অন্যান্য লক্ষণের সাথেও মিলে যাবে। একজন চিকিৎসকের পক্ষে হোমিওপ্যাথির এত ওষুধের সব রোগের লক্ষণ জানা সম্ভব নয়
বর্তমানে একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সব রোগের রোগীর ওষুধ দেন বা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তাতে যে সমস্যা হয় তা হল যেহেতু চিকিৎসকগণ সব রোগের চিকিৎসা করেন তাই সব রোগ সম্পর্কে তার হালকা ধারণা থাকে এবং রোগ নির্বাচন, রোগের লক্ষণ, ভাবী ফল, পথ্যা-পথ্য বিস্তারিতভাবে অবহিত হতে পারেন না। আর এ কারণেই সঠিক ওষুধ নির্বাচনও হয় বাঁধাগ্রস্থ। ফলশ্রæতিতে আরোগ্যের গতি হয় ধীর, রোগী হারিয়ে ফেলে র্ধৈয্য এবং দ্বারস্থ হয় অন্য প্যাথির।
সে জন্য রোগীদের ধারণা হোমিওপ্যাথিক ডাক্তাররা রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না এবং রোগীদের ধারণাও বাস্তবে সত্য। এত রোগের বিস্তারিত একজন চিকিৎসকের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। অনেক রোগ সম্পর্কে ধারণা রাখতে গিয়ে কিছু কিছু মনে থাকে। যখন একজন চিকিৎসক সব রোগের রোগী দেখেন তখন সব রোগের ব্যাপারে যেরূপ হালকা ধারণা থাকে। ঐ সব রোগের ওষুধ সম্পর্কেও হালকা ধারণা থাকাই স্বাভাবিক।
যে সব চিকিৎসক সব রোগের রোগী দেখেন তিনি সব রোগের আলোকে হাতে গোনা কয়েকটি করে ওষুধ মনে রাখেন, যা দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন। এর ফলে সেই রোগীর সুনির্বাচিত ওষুধ দেয়া সম্ভব হয় না। একজন চিকিৎসক যদি অন্যান্য প্যাথির মত আলাদা আলাদা রোগের রোগীর চিকিৎসা করতেন তাহলে সেই রোগের রোগীর সুনির্বাচিত ওষুধ দিতে পারতেন এবং সুনির্দিষ্ট সদৃশ্য ওষুধ দিয়ে দীর্ঘস্থায়ীভাবে আরোগ্য করা সম্ভব হত।
হোমিওপ্যাথিতে রোগের চিকিৎসা হয় না, যখনি একজন রিউমেটিকের রোগী আসেন তখন রেপাটরীতে যেয়ে রিউমেটিকের রুব্রিকটিতে কোন কোন ওষুধ আছে তা দেখে নেয়। যদি রোগের নামে চিকিৎসা না করা হয় তবে কেন রিউমেটিকের রুব্রিকটি দেখলেন। রিউমেটিকের রুব্রিকে যে সব ওষুধ রয়েছে তা থেকে রোগীর সার্বদৈহিক লক্ষণের অলোকে ওষুধগুলোকে পার্থক্য করে সেখান থেকে রিউমেটিকের রোগীর সুনির্বাচিত ওষুধটি বের করে নেয়।
যদি একজন চিকিৎসক শুধু বাত রোগ নিয়ে কাজ করেন এবং বাত রোগে যে সব ওষুধগুলো রয়েছে তা ভালোভাবে জেনে নেন, তাহলেই সেই ডাক্তার বাত রোগীর জন্য যে সুনির্বাচিত ওষুধ দিবেন আর যে ডাক্তার সব রোগের ওষুধ দেন, তিনি সেভাবে পারবেন না। তাহলে অন্যান্য প্যাথিতে যেমন রোগ বিশেষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে, হোমিওপ্যাথিতেও রোগ বিশেষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হতে বাঁধা কিসের?
যখন একজন চিকিৎসক শুধুমাত্র একটি রোগের রোগী কাজ করবেন তখন তিনি সেই রোগের রোগ নির্বাচন, রোগের লক্ষণ, ভাবী ফল, পথ্য ও তথ্য সব বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন এবং সেই রোগের ব্যবহৃত ওষুধগুলো সম্পর্কেও ভাল ভাবে জানতে পারবেন। হোমিওপ্যাথিতে একটি ওষুধ অনেক রোগের ক্ষেত্রে কাজ করে। তাই একজন চিকিৎসকের পক্ষে সব ওষুধের সব কাজ সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়।
আমাদের দেশে এমনিতেই হোমিওপ্যাথিতে ভাল মেধাবী ছাত্র পড়তে আসে না। কারণ অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশে হোমিওপ্যাথিতে সরকারিভাবে ভালো সুযোগ-সুবিধা নেই। আমাদের দেশে সাধারণত কম মেধাবী শিক্ষার্থীরা হোমিওপ্যাথি পড়াশুনা করেন। তারপর যদি তাদের উপর এত বড় বা বিশাল দ্বায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় তাহলে একজন সাধারণ নাগরিকের মাথায় দেশের সরকার প্রদানের দায়িত্ব দিলে দেশের অবস্থা যেমন হ-য-ব-র-ল হয়ে যাবে, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদেরওও চিকিৎসা করতে এসে সেরকম হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। যার ফলে রোগীরা অন্যান্য প্যাথিতে চিকিৎসা শেষ করে স্থায়ী সমাধানের জন্য আমাদের কাছে এসেও ভাল ফলাফল পান না। আমাদের দেশের একজন জাতীয় বিশেষ চিকিৎসক বলেছিলেন- “অন্যান্য প্যাথিতে চিকিৎসক আছে, ওষুধ নাই। আর হোমিওপ্যাথিতে ওষুধ আছে, চিকিৎসক নাই।”
বই খুললে অনেক ওষুধ দেখতে পাই যার ব্যবহার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের ১০০ জনের মধ্যে শতকরা ১/২ জন ব্যবহার করে থাকেন। আবার অনেকে ঐ সব ওষুধের নামও জানেন না। যদি রোগ বিশেষে ওষুধগুলোকে ভাগ করা যেতো, তা হলে একজন চিকিৎসকের এত ওষুধ মনে রাখতে গিয়ে হিমসিম খেতে হতো না।
বর্তমানে যে সব হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক রয়েছেন, তাদের কাছে যে কোন রোগ বা রোগের ওষুধ সম্পর্কে জানতে চাইলে। প্রত্যেক রোগ সম্পর্কে কয়েকটি ওষুধের নাম বলে তিনি আরও বলবেন, আরও ওষুধ আছে।
অথচ প্রয়োজন ছিল কোন রোগের ওষুধ সম্পর্কে জানতে চাইলে একজন চিকিৎসক সেই রোগে ব্যবহৃত সব ওষুধের নাম বলতে পারবেন এবং ওষুধের ব্যবহার বিস্তারিতভাবে জানাতে পারবেন। যেই চিকিৎসক ওষুধের নাম এবং ওষুধের ব্যবহার বিস্তারিতভাবে জানবেন তিনিই পারবেন রোগীর সঠিক চিকিৎসা দিতে।
জ¦র থেকে জন্ডিস, কাশি থেকে ক্যান্সার যে কোন রোগই বলা হোক না কেন সব রোগের রোগীর ওষুধ হোমিওপ্যাথিতে রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো একটাই এই প্যাথিতে কোন রোগের নাম নিলেই শতাধিক ওষুধ আসে। সেখান হতে রোগীর সব লক্ষণের আলোকে একটিমাত্র ওষুধ নির্ধারণ করতে হয়। ঐ রোগীর জন্য একটি ওষুধ নির্বাচন করতে হলে যে রোগ নিয়ে আগত রোগী, সেই রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ওষুধটির কার্যক্রম ভাল ভাবে জানতে হবে। তাই হোমিওপ্যাথিতে রোগ বিশেষে হোমিওপ্যাথিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা বিভাগ তৈরী করলে প্রত্যেকটি ওষুধের সু-ব্যবহার বা চিকিৎসা সেবার সুফল পাওয়া যাবে। হোমিওপ্যাথির মূলমন্ত্রের একটি হলো রোগীকে একটিমাত্র ওষুধ দিতে হবে এবং তা হতে হবে শক্তিকৃত সূক্ষè মাত্রায়।
বর্তমানে হোমিওপ্যাথির নামে হরেক রকম সিরাপ, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এ সব ওষুধ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে চিকিৎসকগণ সঠিকভাবে কোন রোগীর সদৃশ ওষুধ নির্বাচন করতে না পারায় রোগীকে সাময়িক উপশম দেয়ার জন্য বাজারে হোমিওপ্যাথির নামে যে সব ওষুধ রয়েছে তা থেকে এক বা একাধিক ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন।
আধুনিক ডিজিটাল পৃথিবীতে মানুষ যে পেশা বা পদ্ধতিকে যেখানে পেয়েছেন সেখান থেকে উত্তরোত্তর সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন তথা সেই পদ্ধতির উন্নতি সাধন করছেন। আর এই সময়ে হোমিওপ্যাথির পাশাপশি অন্য প্যাথির উন্নতির কথা চিন্তা করলে অনেক কষ্ট পেতে হয়, কারণ এই দুইটি পদ্ধতির নিয়ম নীতি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমÑ তার ফলাফলও ব্যতিক্রম। কিন্তু হোমিওপ্যাথি কোন দিকে যাচ্ছে তা বুঝতে পারছি না !!!!!
ধীরে ধীরে হ্যানিম্যানের হোমিওপ্যাথি হারিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা: স্যামুয়েল হ্যানিম্যান বিসদৃশ স্থুল মাত্রার চিকিৎসা পদ্ধতির কুফল থেকে আমাদের সহজ ভাবে দ্রæত স্থায়ী আরোগ্য করার জন্য সদৃশ হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন – যার মূল মন্ত্র রোগীর রোগ লক্ষণের আলোকে সদৃশ একটি মাত্র ওষুধ শক্তিকৃত সূক্ষ¥ মাত্রায় রোগীকে বিনা কষ্টে আরোগ্য করার নিয়ম চালু করেন।
হ্যানিম্যান এই চিকিৎসা পদ্ধতির শুরুর দিক থেকে প্রথমে দশমিক পদ্ধতির ওষুধ ব্যবহার করলেন, তখন দেখলেন এই পদ্ধতিতে যে গতিতে রোগ আরোগ্য হয় তাতে তিনি সন্তুষ্ট নন। তাই তিনি ওষুধকে আরও সু² করার জন্য শততমিক পদ্ধতির ওষুধ ব্যবহার করলেন। তাতে দেখা গেল দশমিকের তুলনায় শততমিক পদ্ধতির ওষুধ রোগীকে আরও দ্রæত আরোগ্য করে। এতে তিনি বুঝতে পারলেন দশমিকের চেয়ে শততমিক পদ্ধতিতে ওষুধ ব্যবহার করলে Ñ পূর্বের চেয়ে আরও দ্রæত আরোগ্য লাভ হয়। তখন তিনি ওষুধকে আরও দ্রæত কাজ করার জন্য ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতির কথা ভাবলেন। হ্যানিম্যান দেখলেন কোন ওষুধকে যত সূ² বা শক্তিকৃত করা হয় সেই ওষুধের ক্রিয়া তত বেশি। তাই তিনি বললেন- ওষুধ যত শক্তিকৃত বা সূ² করা হবে সেই ওষুধের ক্রিয়া তত বেশি পাওয়া যাবে এটাই হোমিওপ্যাথির মূলনীতি।
হ্যানিম্যানের রেখে যাওয়া পর্যায় ক্রমিক গবেষনার হোমিওপ্যাথি সূ² বা শক্তিকৃতের গতি সামনের দিকে না গিয়ে দ্রæত গতিতে পিছনের দিকে যাচ্ছে, তা বর্তমানে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের চেম্বারের দিকে তাকালেই দৃশ্যমান হয়। হোমিওপ্যাথির উন্নতির কথা বলে যে সব পেটেন্ট মার্কেটে বাজারজাত করা হচ্ছে তা কি আদৌ হোমিওপ্যাথি না অন্যপ্যাথি তা ভেবে দেখা দরকার।
এই সব পেটেন্ট নামে অহোমিওপ্যাথিক ওষুধের ব্যবহার কোন বিধি নিষেধ দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। এই পেটেন্ট বন্ধ করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম চালু করতে হবে। যে নিয়মের মাধ্যমে চিকিৎসকগণ সহজেই রোগীর সদৃশ একটি ওষুধ দ্রæত নির্বাচন করতে পারেন। যে সব চিকিৎসক পেটেন্ট ব্যবহার করেন, তাদের কথা বা বক্তব্য হলো হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত ওষুধ ব্যবহার করেও তো কোন ফলাফল পাই না, তাই টিকে থাকার জন্য পেটেন্ট ব্যবহার করি। এ সব হতাশাগ্রস্থ চিকিৎসকদের এরকম হতাশার কারণ আমরা কখনও ভেবে দেখেছি কি ?
এই হতাশার প্রধান কারণ হলো- হোমিওপ্যাথিতে সব ধরনের রোগের রোগীর ওষুধ আছে। তাই যে কোন সমস্যাই হোক না কেন আমরা সব রোগের রোগীর ওষুধ দেয়ার চেষ্টা করি। এই চেষ্টার কোন নিয়ম-নীতি নেই। পূর্বেই বলা হয়েছে, একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেছিলেন – অন্যান্য প্যাথিতে চিকিৎসক আছে কিন্তু ওষুধ নেই, আর হোমিওপ্যাথিতে ওষুধ আছে কিন্তু চিকিৎসক নেই। আমি সেই চিকিৎসকের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি একথা ঠিক নয়। কারণ হোমিওপ্যাথিতেও ভাল ভাল চিকিৎসক রয়েছেন। কারণ বর্তমানে হোমিওপ্যাথিতে অনেক মেধাবী চিকিৎসক আসছেন। শুধু মাত্র সমস্যা একটিই যে, একজন চিকিৎসককে তার ক্ষমতার চেয়ে অধিক দায়িত্ব পালন করতে হয়।
বর্তমানে মানুষ নানা রকম জটিল ও কঠিন রোগে ভুগছেন। সব রোগের লক্ষণভিত্তিক ওষুধ একজন চিকিৎসকের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা যে শুধুমাত্র মানব দেহেই কাজ করে তা নয়, লক্ষণ সাদৃশে পশু পাখিদের উপরও সমান ভাবে কাজ করে, যদি তা লক্ষণ সদৃশে ব্যবহার করা যায়।
আমাদের কাছে যে সব রোগের রোগী আসে তাদেরকে যদি অঙ্গ ভিত্তিক বা রোগের নামে ভাগ বা শাখা করা যায়। যেমন-
০১. মানসিক।
০২. বক্ষ ব্যাধি।
০৩. নিউরোলজি।
০৪. স্ত্রী-রোগ ও প্রসূতি বিদ্যা।
০৫. যৌন ও চর্মরোগ।
০৬. শিশু রোগ।
০৭. পেপটিক ও গ্যাস্টিক।
০৮. হৃদরোগ।
০৯. বাত ব্যথা ও পক্ষাঘাত।
১০. চক্ষু রোগ।
১১. কান, নাক ও গলা রোগ।
১২. দন্তরোগ।
১৩. ইউরো ও নেফ্রোলজি।
১৪. ডায়াবেটোলজি – ইত্যাদি।
এভাবে রোগীদের ভাগ করা হলে একজন চিকিৎসক শুধুমাত্র একটি বিভাগের রোগ সম্পর্কে ভালভাবে জানতে পারবেন। এইভাবে রোগ ভাগ করা হলে একজন চিকিৎসক মাত্র কয়েকটি রোগ নিয়ে কাজ করবেন, তখনি সেই রোগে যে সব ওষুধগুলো কাজ করে সেই ওষুধগুলো সম্পর্কে খুব সহজেই ভালভাবে জানতে পারবেন। সেই সাথে জানা সহজ হবে রোগ পরিচিতি।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে একজন রোগীকে স্থায়ী চিকিৎসা দিতে হলে রোগীর রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। যেমন –

বর্তমান কষ্টটি সম্পর্কে —-
১. কষ্টটি কোন অঙ্গে ?
২. কখন থেকে কষ্টটি শুরু হয় ?
৩. কষ্টটির উৎপত্তির কারণ কি ?
৪. কষ্টটির প্রকাশ বা অনুভূতি।
৫. কষ্টটি কখন বাড়ে/ কমে ?
৬. কষ্টটি কিসে বাড়ে/ কমে ?
৭. এর সাথে সম্পর্ক যুক্ত লক্ষণ।
এই কষ্টের কি ধরনের চিকিৎসা করা হয়েছে। এ ছাড়া রোগীর সার্বদৈহিক অবস্থা। যথা —
১. পিপাসা
২. খাদ্যঃ-ইচ্ছা, অনিচ্ছা, অসহ্য,ক্ষুধা ইত্যাদি।
৩. পায়খানা
৪. প্রস্্রাব
৫. শয়ন
৬. ঘুম
৭. স্বপ্ন
৮. ঘাম
৯. জ¦ালা বিভিন্ন অঙ্গ ভিত্তিক ও সার্বদৈহিক।
১০. প্রবণতা ও কাতরতা।
১১. দূর্ঘটনা / আঘাত।
১২. বাহ্য শক্তির প্রভাব, বিভিন্ন জীব জন্তুর কামড়।
১৩. বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিবরণ।
১৪. মানসিক লক্ষণ
১৫. যৌন জীবন – পুঃ ও স্ত্রী
১৬. মহিলাদের ঋতুস্্রাব লিউকোরিয়া ও অন্যান্য।
১৭. পূর্বরোগ – নিজ বা বংশগত ইত্যাদি লক্ষণ জানতে হয়।
যে কোন রোগের রোগীর ক্ষেত্রে এভাবে বিস্তারিত- তথ্য সংগ্রহ করে সেই লক্ষণ গুলো সদৃশে একটি সুনির্বাচিত ওষুধ নির্বাচন করতে হয়। এত সব লক্ষণ সংগ্রহ করা একজন চিকিৎসকের জন্য এমনিতেই কঠিন কাজ। তারপর যদি সেই চিকিৎসক সব রোগের রোগীর ওষুধ নির্বাচন করতে চান, তাহলে কি তা সেই চিকিৎসকের জন্য সম্ভব? প্রত্যেক রোগের রোগীর ক্ষেত্রে সেই রোগ বিশেষে আরও আলাদা আলাদা তথ্য ভিত্তিক ওষুধ রয়েছে যা একজন চিকিৎসকের পক্ষে মনে রাখা অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে রোগগুলোকে কয়েকটি বিভাগে ভাগ করে নিলে চিকিৎসকের কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে।
রোগীর বর্তমান কষ্টটি সংগ্রহ করা কত যে কঠিন তার একটি উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটি সহজ হয়ে যাবে। একজন রোগীর মাথা ব্যথার অনুভূতি সংগ্রহ করতে হলে চিকিৎসককে যে সব ব্যথার অনুভূতি জানতে হবে তা হলো-
১. কামড়ানো।
২. যেন আঘাত লেগেছে।
৩. রন্ধ্রকর, খনন, ¯ুŒ বসানোর মতো যাতনা।
৪. জ¦ালাকর বেদনা।
৫. খনন করার মতো।
৬. ফেটে যাওয়ার মতো।
৭. খিল ধরার মতো।
৮. চূর্ণ করার মতো, ভেঙ্গে গিয়েছে, খন্ড খন্ড হয়েছে।
৯. কেটে ফেলার মতো, বর্শাবিদ্ধ করার মতো, ছুরিকাঘাত করার মতো।
১০. টেনে ধরার মতো।
১১. আকর্ষণ করার মতো, কষে ধরার মতো।
১২. অপ্রবল বেদনা।
১৩. মুেঠা করে ধরার মতো।
১৪. পিষে চূর্ণ করার মতো।
১৫. কামড়ানির মতো।
১৬. খাঁজ কাটার মতো।
১৭. ঝাকুনি লাগার মতো।
১৮. বিদীর্ণ করার মতো।
১৯. বর্শাবিদ্ধ করার মতো।
২০. যেন একটি পেরেক বিদ্ধ করা হচ্ছে।
২১. যেন মাথাটা খোলা আছে এরকম।
২২. যেন একবার খুলছে একবার বদ্ধ হচ্ছে।
২৩. ঠোকর মারার মতো।
২৪. চিমটি কাটার মতো।
২৫. যেন গোজ, খিল বা কীলক দ্বারা বিদ্ধ হচ্ছে।
২৬. যেন গোজটি আকস্মাৎ জোরে ঢুকিয়ে দিয়ে ক্রমশ: বেশী চাপ দেয়।
২৭. চাপনবৎ।
২৮. চুল ধরে টানছে এরকম অনুভূতি।
২৯. টেনে ধরে রেখেছে এরকম।
৩০. চেঁচে ফেলার অনুভূতি।
৩১. চূর্ণিত হওয়ার অনুভূতি।
৩২. তীরবিদ্ধবৎ বেদনা।
৩৩. তীব্র যন্ত্রনাকর।
৩৪. ক্ষততা বোধ যুক্ত, থেৎলানের মতো, চাপের অনুভূতি।
৩৫. মচকে যাওয়ার মতো অনুভূতি।
৩৬. ভেঙ্গে যাওয়ার মতো অনুভূতি।
৩৭. ছুরিকাঘাতের মতো অনুভূতি।
৩৮. কাঠি দিয়ে খোঁচানোর মতো অনুভূতি।
৩৯. সূচীবিদ্ধকর।
৪০. বিহŸল কর, হতবুদ্ধিকর।
৪১. ছিন্নকর, বিদীর্ণকর।
৪২. কষে ধরার মতো।
৪৩. টুংটাং শব্দ যেমন পিয়ানোর তার ছিড়লে হয়ে থাকে।
৪৪. ক্ষতের ব্যথার মতো।
৪৫. গোঁজ বিদ্ধ হওয়ার মতো।
উল্লেখিত ব্যথার ৪৫টি অনুভূতির প্রকার দেয়া হয়েছে।
চিকিৎসক রোগীর বর্তমান কষ্টের রোগ লক্ষণ সংগ্রহে যে ৭ টি ধাপ আছে এখানে কষ্টের অনুভূতি মাত্র ১ টি দেয়া হয়েছে এবার ভাবেন বাকী ৬ টির বর্ণনা একই ভাবে জানা থাকলেই চিকিৎসক রোগীর বর্তমান কষ্টের একটি আদর্শ রোগীলিপি তৈরি করতে পারবেন। এর সঙ্গে সংগ্রহ করতে হবে রোগীর সার্বদৈহিক অবস্থার বর্ণনা যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এত সব লক্ষণ সংগ্রহ করতে গেলে একজন চিকিৎসক কি করে এক সাথে অনেক রোগের রোগীর লক্ষণ সংগ্রহ করবেন? যদি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে ওষুধ গুলোকে রোগ বিশেষে বা রোগের রোগীদেরকে রোগের নামে বিভাগে পরিণত করা হতো তাহলেই একজন চিকিৎসক রোগীকে আদর্শ আরোগ্য দিতে পারতেন।
রোগীদের আস্বস্ততা তৈরি করা
বর্তমান গতিশীল সমাজের মানুষ যে কোন কাজ করার সময় বা কেনা-কাটা করার ক্ষেত্রে টাকা-পয়সার চিন্তা করে না। শুধু চায় ভাল বস্তুটি সংগ্রহ করতে, টাকা কত লাগবে তা ভাবতে চায় না। চায় শুধু সময় বাঁচাতে এবং ভাল জিনিসটি সংগ্রহ করতে। তেমনি যে কোন রোগের রোগী এখন চিকিৎসা সেবা নেয়ার সময় কোন্ ডাক্তারের চিকিৎসা ভাল বা কে বড় ডাক্তার তার কাছে চিকিৎসা নিবার জন্য উদগ্রীব। চিকিৎসকের ফি-বা খরচ চিন্তা করে না। তাই বর্তমানে কোন রোগী নিজের বা আপন জনদের চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে এখন আর সাধারন চিকিৎসককে দেখাতে রাজি নন। যে কোন রোগী যে রোগে ভুগছেন সে রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া চিকিৎসা নিতে রাজী নন। প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেন -আমি যে ডাক্তারের কাছে যাব তিনি কি এই রোগের বিশেষজ্ঞ? বর্তমানে উঁচু থেকে নীচু, শিক্ষিত থেকে মূর্খ যে কোন রোগী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার খুঁজেন।
হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে এর প্রচলন অনেক পুরাতন। এই গতিশীল আধুনিক সমাজে অন্যান্য প্যাথির ন্যায় হোমিওপ্যাথিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরি হলে রোগীদের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রতি আরও আস্থা বেড়ে যাবে। রোগীদের ধারণা যে চিকিৎসক যে রোগে বিশেষজ্ঞ তিনি সেই রোগ সম্পর্কে ভাল চিকিৎসা দিতে পারেন। রোগীদের এই ধারণা অমূলক নয়, কারণ একজন চিকিৎসক যদি রোগের একটি বিভাগ নিয়ে গবেষনা করেন তাহলেই সে চিকিৎসক সেই বিভাগ সর্ম্পকে পূর্ণাঙ্গভাবে জানতে পারবেন এবং রোগীর সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।
চিকিৎসকদের মানোন্নয়ন
হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসকগণ ডিগ্রী তথা—ডি.এইচ.এম.এস অথবা বি.এইচ.এম.এস পাশ করার পর সাধারণত চিকিৎসা সেবায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন আর কোন লেখা-পড়া করতে পারেন না বা সম্ভব হয় না কারণ এদেশে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের মানোন্নয়নের জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষনের কোন ব্যবস্থা চালু নেই। এদিকে ডি.এইচ.এম.এস পাশ করার পর অনেকেরই বয়সের সময়সীমার কারণে আর বি.এইচ.এম.এস করা সম্ভব হয় না। যদি হোমিওপ্যাথিতে “বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি” চালু থাকতো তাহলে এই সকল চিকিৎসকগণ নিজেদের মানোন্নয়নে আরও লেখা-পড়া করার সুযোগ পেতেন। এতে করে চিকিৎসকদের চিকিৎসার মান বৃদ্ধি পেতো এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পেশারও সুনাম বৃদ্ধি পেতো।
সরকারী অনুদানের আগ্রহ তৈরীতে
বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় হোমিওপ্যাথিক কলেজের নামের সঙ্গে কলেজ ও হাসপাতাল লেখা রয়েছে। যদি জানতে চান, হাসপাতাল কোথায়? গিয়ে দেখবেন কলেজের একটি রুমে একটি / দুইটি ওষুধের আলমারী রয়েছে তাতে প্রচুর ওষুধের শিশি আছে। কোনটিতে ওষুধ আছে – প্রায় গুলো খালি, শিশির উপর ময়লা জমে আছে। কতযুগ যেন এই শিশিটি কেউ স্পর্শই করেনি। কারণ কলেজ কমিটি ওষুধ কেনার সময় অনেক লম্বা ওষুধের তালিকা তৈরী করেছিলেন, সেই অনুযায়ী ওষুধ সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু যে সকল চিকিৎসকদেরকে এই ওষুধ ব্যবহারের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি এতসব ওষুধ প্রয়োগ করতে পারেন না বা শেখার চেষ্টাও করেন না। কলেজের নেম প্লেটে হাসপাতাল লেখা দেখে অনেক রোগী প্রবল আগ্রহে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু রোগী আসেন প্রচুর, ডাক্তার একজন বা দুই জন । যত রোগী আসেন এদের বেশীর ভাগই জটিল রোগে আক্রান্ত, একেক জনের একেক রোগ।
বিভিন্ন প্যাথিতে ব্যর্থ হয়ে রোগী রোগের চিকিৎসা নিতে আসেন হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালে। এখানে এসে যখন সুচিকিৎসা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান তখন রোগীদের মন্তব্য হোমিওপ্যাথিক কলেজের হাসপাতালে পযর্ন্ত চিকিৎসা করেছি কোন ফলাফল পাইনি। আর সাধারণ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কি করবেন। রোগীর এই মন্তব্য একেবারেই অমূলক নয়।
প্রত্যেক হোমিওপ্যাথিক কলেজে রোগ বিশেষে বিভাগ চালু থাকলে, উপস্থিত রোগীদের বিভাগ ভিত্তিক চিকিৎসা দেয়া হলে এবং সেই বিভাগে ঐ রোগ সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার চিকিৎসা দিলে বর্তমানে কলেজ হাসপাতালে রোগী যতটুকু উপকৃত হয় তার চেয়ে বেশী উপকৃত হবে। পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদেরকে সরকারী হাসপাতাল গুলোতে অন্যান্য প্যাথির চিকিৎসকদের মত বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ দেয়া সহজ হবে।
হোমিওপ্যাথিক কলেজে যে হাসপাতাল রয়েছে তাতে বিভিন্ন বিভাগ চালু করে, বর্তমানের চেয়ে বেশী সাফল্য অর্জন করতে পারলে, সরকারীভাবে সহযোগীতা নিয়ে সম্পূর্ণ একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

লেখক- ডা. ফারুকী
০১৭১১০৩৯২৩৯