Hsrf_logo

HSRF – Homoeopathy Study And Research Foundation

আজ অর্গাননের ২৮৪ নং সূত্র পড়বার সময় অনেকদিন আগের একটি ঘটনা মনে পড়লো।

১৯৮৪ সাল, তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। সেই সময় আমাদের বাড়ির কাছে তখন তেমন ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো না। একটু দূরে যেতে হতো। তাই আমাদের ২গ্রাম পর যেখানে পড়ছিলাম, সেখান থেকে যাতায়াতে কষ্ট হতো। তাই সেখানে লজিং ছিলাম। তখন আমার বয়স ১২/১৩বছর।

যে ঘরে লজিং ছিলাম, তাদের বড়ছেলের নাম আব্দুল খালেক। খালেকের দাদার বাবার কোন ভাই ছিলো না। দাদারও ভাই ছিলো না। খালেকের বাবা-ও একা। এমনকি খালেক নিজেও একা, তার একটি বোন ছিলো। খালেক বিয়ে করার ১০বছর পর একটি পুত্রসন্তান হলো। তার মা ছেলে বউকে খুবই সাবধানে রাখেন, অনেক যত্ন করেন। বউমাকে কোনো কাজকর্ম করতে দেন না। সব তিনি একাই করেন। বউমাকে শুষ্ক খাবার দেন দ্রুত সুস্থ হতে, পুষ্টিকর খাবারও কম দেন না। সব মিলে বউমাকে অনেক ভালভাবে সাবধানে রাখছেন।

নাতির বয়স মাত্র ২মাস চলছে। বউমা বায়না করছে সে অনেকদিন শুকনা মরিচের ভর্তা খায়নি, আজ খাবে। শাশুড়ী অনেক করে বুঝাচ্ছে। বউমা ছোট মানুষ, বয়স ১৫/১৬বছর বয়সী। সে নাছোড়বান্দা, সে তো শুকনা মরিচের ভর্তা খাবেই।

শাশুড়ী যতোই বুঝাচ্ছে বউমার ভর্তার প্রতি ততই আগ্রহ বাড়ছে। একপর্যায়ে শাশুড়ী বউমাকে ভর্তা খেতে দিলেন। শর্ত একটি-২দিন তার নাতিকে বুকের দুধ দেবেনা।
বউমা তাতেও রাজি। বাচ্চাকে ২দিন দুধ খাওয়াবেনা, তবুও মরিচের ভর্তা খাবে।

যথারীতি বউমা শুকনা মরিচের ভর্তা খেলো।শাশুড়ীর অজান্তে ২মাসের ছেলেকে দুধ খাওয়ালো।বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর ১ঘণ্টা পর বাচ্চা উচ্চ শব্দে চিৎকার, তার কান্না থামছেনা।
বাচ্চার দাদী বুঝে ফেলেছেন, বউমা তার নাতিকে দুধ খাইয়েছে।

শাশুড়ী বউমাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি নাতিকে বুকের দুধ দিয়েছো? বউমা চুপ। শাশুড়ীমা দৌড়ে ছুটে গেলেন এলাকার হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার মাস্টার বাবুর কাছে। মাস্টার বাবুকে ঘটনা সব খুলে বললেন। মাস্টার বাবু এক বোতল পানিতে N.V M2 ১টি বড়ি দিয়ে মিশিয়ে বললেন এই ওষুধটি তোমার বউমাকে ৩ঘণ্টা পরপর খাওয়াবে। ভদ্রমহিলা ডাক্তারের সাথে কি ঝগড়া,’রোগ আমার নাতির, ওষুধ দিবেন নাতিকে। বউমাকে কেন?’
আমাদের সেই প্রাইমারির মাস্টার হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার, তিনিও মজার মানুষ। রোগীর দাদিকে বললেন, আপনারা কেমন মানুষ এতো ছোট ২মাসের বাচ্চাকে কেন শুকনা মরিচের ভর্তা খাওয়ালেন?
ভদ্রমহিলা রাগে আরও উত্তেজিত হয়ে বলছেন, কি ব্যাপার মাস্টার ভাই,আপনি পাগল হয়েছেন? আমি কেন এতো ছোট নাতিকে মরিচের ভর্তা খাওয়াতে যাবো? ডাক্তার-তাহলে ওষুধ দিয়ে কি করবেন?
দাদী- বউমা মরিচের ভর্তা খেয়েছে আর নাতি মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে সেই মরিচের ভর্তার গুণাগুণ পেয়েছে। সে কারণে ওষুধ চাই।
ডাক্তার সাহেব এবার রোগীর দাদিকে বলছেন-তাহলে মরিচ ভর্তার ন্যায় আপনার বউমা ওষুধ খাবে আর নাতি দুধের মাধ্যমে ওষুধের ফলাফল পাবে।
দাদী-ডাক্তারমশাই, আমি এমনভাবে ভাবিনাই।আপনাকে ধন্যবাদ।

আঃ খালেকের সন্তানের সুস্থতা আমাদেরকে বুঝাচ্ছে মা ওষুধ খেলে সন্তান সুস্থ হবে।
দেহে ওষুধ কাজ করার মাধ্যমগুলো হলো-জিহবা, মুখ, পাকস্থলী, দেহের পাতলা ত্বক, নাকে ঘ্রাণও মায়ের বুকের দুধ।

মূলকথা- দেহে ওষুধের ক্রিয়া গ্রহণের মাধ্যমগুলোর সরাসরি পাচটি ও অন্যের মাধ্যম একটি। সব কয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে। যখন যেটি প্রয়োজন তখন তা ব্যবহার করতে হবে।

লেখক- ডা. ফারুকী
০১৭১১০৩৯২৩৯